স্বদেশ ডেস্ক: জাতিসঙ্ঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরে এবারো রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণ, সাইড ইভেন্টে আয়োজিত বিশেষ বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে সম্পৃক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন। বুধবার নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে প্রধানমন্ত্রীর জাতিসঙ্ঘ সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি। এছাড়াও আসামের এনআরসি ইস্যু, রোহিঙ্গা সংকট ও কাশ্মিরের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়েও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক হবার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
জানা যায়, জাতিসঙ্ঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর রোববার নিউ ইয়র্ক পৌছবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার পরিবারের সদস্যবর্গের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিবেশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি সফরসঙ্গী হবেন। ধারণা করা হচ্ছে এবারও প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হচ্ছেন দুই শতাধিক সরকারি বেসরকারি ব্যক্তিবর্গ।
প্রধানমন্ত্রীর জাতিসঙ্ঘ সফরের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু হবে ২৩শে সেপ্টেম্বর ইউনিভার্সেল হেল্থ কাভারেজ শীর্ষক দিনব্যাপী উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এতে প্রধানমন্ত্রী সাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের সাফল্যের বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানান ড. মোমেন। একইদিন প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আয়োজিত ক্লাইমেট এ্যাকশন সামিটে অংশগ্রহণ করবেন। ওই দিন বিকেলে দ্যা ভ্যাকসিন এলায়েন্স ভূষিত “ভ্যাকসিন হিরো” সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কারের জন্য এবছর মনোনীত করা হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ গ্লোবাল এ্যাকশন ফর এডাপ্টেশন শীর্ষক একটি সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও একইদিন বাংলাদেশের আয়োজনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদসহ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছেন এমন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষনেতারা বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এই সাইড ইভেন্টে রোহিঙ্গাদের অতিদ্রুত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মুসলিম বিশ্বসহ জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রের সহযোগিতা ও করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।
এসময় এক বিদেশি সাংবাদিক রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কেন চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের সাথে বৈঠক করছে। এখানে কেন ভারতকে বাইরে রাখা হচ্ছে। জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক ভাবে সমাধান করতে চাইলেও আমরা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের একটি অভিভাবকত্ব আশা করি। এই যাত্রায় চীন এগিয়ে এসেছে। অন্য যে কেউ এতে সহায়তা করতে আসতে পারে।
২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্ব শীর্ষক এক সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল সামিটে অংশগ্রহণ করবেন। এতে প্রধানমন্ত্রী এসডিজি বাস্তবায়নে এর লক্ষ্যসমূহ জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের গৃহীত কার্যক্রম তুলে ধরবেন এবং এসডিজি এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি বর্ণনা করবেন।
২৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমনন্ত্রী ইউনিসেফ প্রদত্ত সম্মাননা ‘চ্যাম্পিউন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইউথ’ গ্রহণ করবেন। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আয়োজনে Sustainable Universal Health Coverage: Comprehensive Primary care inclusive of mental health and disabilities শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশ নেবেন। এতে কমিউনিটি ক্লিনিক খাতে বাংলাদেশের অনুকরণীয় সাফল্য এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিশেষ করে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরা হবে। ভূটানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী উক্ত সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। সভাটি সঞ্চালনা করবেন বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ‘শুভেচ্ছা দূত’ মিস সায়মা ওয়াজেদ হোসেন।
একইদিন প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনতিক উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রযাত্রা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যুগান্তকারী সাফল্য ও নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার বিষয়সসূহ আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, তার বক্তব্যে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, ব্লু ইকোনমি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার মত বিষয়সমূহ উঠে আসবে।
এছাড়া, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এবারও তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা পেশ করতে পারেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে নতুন Resident Coordinator System পরিচালনে সহায়তার জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের উদ্যোগে গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডে বাংলাদেশের পক্ষ হতে ১ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান প্রদানের ঘোষণা প্রদান করবেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরকালে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন ও ইউএস চ্যাম্বার্স অব কমার্সের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠকে মিলিত হবার কথা রয়েছে।
এ সকল সভার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব কর্তৃক সকল দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানগণের জন্য আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক আয়োজিত অভ্যর্থনায় অংশগ্রহণ করবেন। প্রতি বছরের মত এবাররো যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ২৮শে সেপ্টেম্বর একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত রানী ম্যাক্সিমা, Billd Melinda Gates Foundation Gi Co-chair Mr. Bill Gates, আইসিসি এর চীফ প্রসিকিউটর, Exon Mobil এর প্রধান নির্বাহীসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানগণের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিয়ে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রী ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তা সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি।